‘নেটওয়ার্কের বাইরে’তে তুমুল আলোচিত হয়েছিলেন জোনায়েদ বোগদাদী। ওয়েব ছবিটির সাকসেস পার্টি থেকে ফেরার পথে পড়লেন সড়ক দুর্ঘটনার কবলে। হাসপাতালের লাইফ সাপোর্ট থেকে ফিরে এসেছেন, সম্প্রতি ফিরেছেন অভিনয়েও। তাঁর খোঁজ নিয়েছেন মীর রাকিব হাসান
এখন কি পুরোপুরি সুস্থ বলা যাবে আপনাকে?
হ্যাঁ, সম্পূর্ণ সুস্থ। মেডিসিনের যত কোর্স ছিল সব শেষ হয়েছে। এখন আবার শোবিজে কাজ শুরু করলাম। সামনের মাসে আমার নতুন কিছু কাজ আসবে।
সেই রাতের কথা মনে পড়ে এখনো?
মনে করতেও চাচ্ছি না। আমার কাছে সেটি দুঃস্বপ্নের রাত। কিভাবে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে এখনো তার কোনো হিসাব মেলাতে পারি না। মাঝে জীবন থেকে এতগুলো সময় হারিয়ে গেছে। এত হাড় ভাঙল, কত স্ট্রাগল গেল—আমি শুধু সময়টা ভুলতে চাই। আমার যেটি মনে হয়, হয়তো জীবনকে শেখার জন্য দুর্ঘটনাটি আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল।
আশীর্বাদ কেমন করে…?
দুর্ঘটনার পরে অনেক ইতিবাচক ব্যাপার ঘটেছে আমার সঙ্গে। পরিবার ও কাছের মানুষদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক আরো ভালো হয়েছে। সম্পর্কগুলোর প্রতি আমি আরো যত্নশীল হয়ে উঠেছি। তা ছাড়া জীবনে ডিসিপ্লিনটা খুব দরকার, এটি আমি খুব ভালো বুঝতে পেরেছি। দুর্ঘটনাটি আমাকে আরো ম্যাচিউর করেছে।
হাসপাতালের দিনগুলো কেমন ছিল?
সাত দিন কোমাতে ছিলাম, এর মধ্যে লাইফ সাপোর্টে ছিলাম তিন দিন। সার্জারির পরে তিন মাসের মতো হাসপাতালে ছিলাম। মেডিসিন প্লাস ডাক্তারের অবজারবেশনে ছিলাম আট মাস। কোমা থেকে যখন আমার জ্ঞান ফিরল বা নিজেকে দেখলাম, তখন নিজেকেই চিনতে পারছিলাম না। অনেক সার্জারি হয়েছে তো শরীরে…। অনেক হাড় ভেঙেছে, দাঁত ভেঙেছে, নাক ভেঙেছে, মাথা ভেঙেছে—শরীরের মোটামুটি ভাঙার কিছু বাকি ছিল না। কিছু বন্ধু ছিল যাদের সঙ্গে এখন আর যোগাযোগ হচ্ছে না। দুর্ঘটনার পর দেখলাম ফ্রেন্ড সার্কেল অনেক কমে গেল। আগে বন্ধুদের নিয়েই ছিলাম। এখনো যারা আমার পাশে আছে তারাই হয়তো বন্ধুত্বের উদাহরণ।
যে বন্ধুদের সঙ্গে দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন (শরীফুল রাজ, নাজিফা তুষি, খায়রুল বাসার), তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে?
যোগাযোগ হয়। তবে আমার ওই বন্ধুরা এখন অনেক ব্যস্ত। আগের মতো আড্ডাবাজিটা হয়ে ওঠে না। এটি নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। কারণ, সবাই চায় কাজে ব্যস্ত থাকতে। আমিও সব সময় তাদের শুভ কামনা জানাই।
শোবিজের মানুষদের সহযোগিতা কেমন পেয়েছেন?
চ্যানেল আই পরিবার, ইবনে হাসান খান—সব সময়ই অভিভাবকের মতো পাশে ছিলেন। এ ছাড়া কয়েকজনের নাম না নিলেই নয়, যাঁরা মানসিক সাপোর্ট দিয়ে গেছেন—শাহেদ আলী সুজন ভাই, তানভিন সুইটি আপু, তারিক আনাম খান স্যার, নিমা রহমান ম্যাম। অর্থনৈতিকভাবে কারো সাপোর্টটি লাগেনি, পরিবারই সবটা দেখেছে।
‘নেটওয়ার্কের বাইরে’তে দারুণ পরিচিতি পেয়েছিলেন, দুর্ঘটনায় না পড়লে এত দিনে ভালো একটি অবস্থানে থাকতে পারতেন…
আমার ক্যারিয়ার তো খুবই অল্প সময়ের। ‘মেনস ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি চ্যানেল আই—কে হবে মাসুদ রানা?’ প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় রানার আপ হয়েছিলাম। এরপর ক্লোজআপ কাছে আসার গল্প করেছি। সালাহউদ্দিন লাভলু, মিজানুর রহমান আরিয়ানসহ বেশ কয়েকজন ভালো পরিচালকের কাজ করেছি। ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’ আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে হিট প্রডাকশন, এটি ঠিক। তবে রিয়ালিটি শোয়ের পর যেখান থেকে শুরু করেছিলাম, সেভাবেই শুরু করতে চাচ্ছি। কথায় আছে, আমাদের দুইটি জীবন, প্রথম জীবনের মৃত্যু বুঝতে পারলে দ্বিতীয় জীবনটি তখন আরো যত্নশীল হয়ে শুরু করা উচিত। হয়তো আমার একবার মৃত্যু হয়ে গেছে, এখন দ্বিতীয় মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
অভিনয়ে ফিরে কী কী করলেন?
অভিনয়ে ফিরেছি খবরটা অনেকেই জানেন না। আমিও সেভাবে জানাইনি। ভিকি জাহেদের টেলিফিল্ম ‘কার্নিশ’ করেছি, দু-একটি বিজ্ঞাপনচিত্র করেছি। দুর্ঘটনার সময় নিয়মিত ‘গুলশান এভিনিউ সিজন ২’ করতাম। সুস্থ হয়ে এই সিরিয়ালের মাধ্যমেই শুটিং করি। ভালো কিছু করার চেষ্টা আগের মতোই থাকবে। তা ছাড়া পড়াশোনা শেষ করার চেষ্টাও করছি। ইউল্যাবে মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজমে পড়ছি।