উত্তর-পূর্ব ভারতের মিজোরাম ২০২২ সালে ভারতে আসা শরণার্থীদের প্রধান আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে। গত বছর প্রায় ১০ হাজার শরণার্থী ভারতে এসেছেন, যার মধ্যে প্রায় ৯ হাজারই মিজোরামে আশ্রয় নিয়েছেন। এসব শরণার্থী মিয়ানমারের চিন প্রদেশ থেকে মিজোরামে এসেছেন। ‘ভারতের শরণার্থী পরিস্থিতি ২০২২’ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে দিল্লির শরণার্থী অধিকারবিষয়ক সংগঠন রাইটস অ্যান্ড রিস্কস অ্যানালিসিস গ্রুপ (আরআরএজি)। মিয়ানমার ছাড়া আফগানিস্তান থেকেও কিছু শরণার্থী মিজোরামে প্রবেশ করেছেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
আরআরএজির প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০২২ সালের শেষে ভারতে আশ্রয় নেওয়া মোট শরণার্থীর সংখ্যা চার লাখে পৌঁছেছে। এর মধ্যে গত বছর পশ্চিম মিয়ানমারের চিন প্রদেশে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ হওয়ায় বেশি শরণার্থী মিজোরামে প্রবেশ করছে। মিজোরামের মানুষের সঙ্গে সেখানকার মানুষের জাতিগত অভিন্নতা থাকায় এই সীমান্ত বন্ধ করা যায়নি। ওই রাজ্যের মানুষ এখনো খাদ্য ও অস্থায়ী আশ্রয় দিয়ে তাদের সাহায্য করছে। এই অনুপ্রবেশ ভারতের জন্য ক্রমেই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ ছাড়া, মিয়ানমার থেকে অন্তত ৮৫ জন উত্তর-পূর্ব ভারতের মণিপুরেও প্রবেশ করেছে। অপর দিকে ১০০ হিন্দু ও শিখ শরণার্থীকে আফগানিস্তান থেকে বিমানে ভারতে আনা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
আরআরএজির ডিরেক্টর সুহাস চাকমা বলেন, হিন্দু ও শিখদের বিমানে করে নিয়ে আসা হলেও, রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে ভারতের শরণার্থীবিষয়ক নীতি কাজে লাগানো হয়েছে। এই নীতি হলো, ‘আটক ও ফেরত পাঠানো’। কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগরবিষয়ক মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরি মুসলিম সংখ্যালঘুদের জন্য পশ্চিম দিল্লির বক্করওয়াল এলাকায় ফ্ল্যাট এবং নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ২০২২ সালের ১৭ আগস্ট। কিন্তু তাঁর এই মন্তব্যের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, রোহিঙ্গাদের একটি বন্দিশিবিরে রাখা হবে এবং তারপর তাদের ফেরত পাঠানো হবে।
সুহাস চাকমা জানান, ২০২২ সালে ভারতে অন্তত ২০৩ শরণার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ১১৮ জন রোহিঙ্গা, ৮৫ জন মনিপুরে আসা কুকি-চিন এবং ২০ জন মিয়ানমার থেকে মিজোরামে আসা শরণার্থী। বিভিন্ন অভিযোগে এদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার মধ্যে বেআইনি অনুপ্রবেশ থেকে অস্ত্র চোরাচালানের অভিযোগও রয়েছে বলে শরণার্থী অধিকারবিষয়ক সংগঠনটি জানিয়েছে।
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ভারত খুবই কঠোর মনোভাব দেখিয়েছে। ভারতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সরাসরি মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এমনকি তৃতীয় দেশে যাওয়ার সুযোগও দেয়নি ভারত। এমনি একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী সানোয়ারা বেগমকে তৃতীয় দেশের যাওয়ার সুযোগ দেয়নি ভারত।
এ বিষয়ে সুহাস চাকমা জানান, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক শাখা ইউএনএইচসিআরও সানোয়ারাকে শরণার্থী বলে চিহ্নিত করেছিল। তিনি বলেন, স্বামীর সঙ্গে দেখা করার জন্য সানোয়ারা বেগমকে ভিসাও দিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ভারত তাঁকে বের হতে দেয়নি। ভারতের যুক্তি ছিল, সানোয়ারা বেগম এবং তাঁর সন্তানদের মিয়ানমারের দূতাবাস তাদের দেশের নাগরিক বলে চিহ্নিত করেনি। ভারতের নীতি হলো, শরণার্থীদের তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো। যেহেতু এ ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না, তাই তৃতীয় কোনো দেশে শরণার্থীকে পাঠানো যাবে না। কারণ, এটা ভবিষ্যতের জন্য একটা উদাহরণ হিসেবে থেকে যাবে।