অবৈধভাবে গ্যাস-সংযোগ স্থানান্তর এবং নতুন সংযোগ দেওয়ার অভিযোগে সাবেক প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানবিষয়ক মন্ত্রী নুরুল ইসলামের ছেলে মুজিবুর রহমানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক। প্রাথমিক অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পরই দুদক মামলাটি করে। মন্ত্রীপুত্রসহ পাঁচজনকে অব্যাহতি দিয়ে সেই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে অনুমোদন দিয়েছে দুদক। সংস্থাটি বলছে, সাক্ষ্যপ্রমাণ না পাওয়ায় মামলা থেকে তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়া পাঁচজন হলেন মন্ত্রীপুত্র মুজিবুর রহমান, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) সাবেক মহাব্যবস্থাপক (ইঞ্জিনিয়ারিং ও সার্ভিসেস) মো. সারওয়ার হোসেন, বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত দক্ষিণ জোনের টেকনিশিয়ান (সার্ভেয়ার) মো. দিদারুল আলম, সাবেক মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) মোহাম্মদ আলী চৌধুরী ও ব্যবস্থাপক মজিবুর রহমান।
দুদক প্রধান কার্যালয়ের কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হকের সই করা একটি চিঠি বুধবার চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে আসে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘তদন্ত কর্মকর্তার দাখিল করা সাক্ষ্য-স্মারক ও অন্য কাগজপত্র পর্যালোচনায় উপযুক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ না পাওয়ায় দুদক আইন–২০০৪–এর ৩২ ধারা এবং দুদক কমিশন বিধিমালা ২০০৭–এর বিধি ১৫ উপবিধি ১–এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের অনুমোদন দেওয়া হলো।’ চিঠিটি ইস্যু হয়েছে ১৩ ফেব্রুয়ারি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম আদালতে দায়িত্বরত দুদকের জিআরও আবদুল লতিফ প্রথম আলোকে বলেন, মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের অনুমোদনের চিঠিটি আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রতিবেদন এখনো পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক মো. আতিকুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘তদন্তে যা পেয়েছি, কমিশনে তা–ই তুলে ধরেছি। কমিশন চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের অনুমোদন দিয়েছে।’ সাক্ষ্যপ্রমাণ না পেলে মামলা কীভাবে হলো—এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হননি তিনি।
২০২১ সালের ১০ জুন দুদকের তৎকালীন উপসহকারী পরিচালক (বর্তমানে চাকরিচ্যুত) শরীফ উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি করেছিলেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছিল, চট্টগ্রাম নগরের হালিশহর এলাকার বাসিন্দা এম এ সালামের (বর্তমানে মৃত) নামে বরাদ্দ করা ১৮টি অব্যবহৃত দ্বৈত চুলার গ্যাস–সংযোগ ছিল। এর মধ্যে ১২টি নগরের চান্দগাঁও সানোয়ারা আবাসিক এলাকার গ্রাহক মুজিবুর রহমানের নামে স্থানান্তর করা হয়। এ কাজে সালামের স্ত্রীর নামে ভুয়া চুক্তিনামাও করা হয়।
এজাহার অনুযায়ী সালাম ও মুজিবুরের গ্রাহক সংকেত পৃথক হওয়ায় সংযোগ স্থানান্তরের কোনো আইনগত বৈধতা নেই। এ ছাড়া ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে গ্যাস–সংযোগ দেওয়া বন্ধ থাকলেও সে সিদ্ধান্ত অমান্য করে মুজিবুরের নামে আরও ১০টি সংযোগ দেওয়া হয়। ২০১৭ সালের ২ মার্চ থেকে পরের বছরের ২ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে এসব সংযোগ দেওয়া হয়েছিল। এ সময়কালে ভুয়া আবেদনপত্র তৈরির মাধ্যমে গ্রাহক মুজিবুরের নামে মোট ২২টি অবৈধ সংযোগ দেওয়া হয়।
মামলা হওয়ার তিন দিন পর ২০২১ সালের ১৩ জুন অবৈধ ২২টি সংযোগ বিছিন্ন করে কেজিডিসিএল। কেজিডিসিএলের তিন কর্মকর্তাকেও গ্রেপ্তার করে দুদক। পরে অবশ্য তাঁরা জামিনে বেরিয়ে আসেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, যেকোনো বিষয়ে মামলা করার আগে দুদক ঘটনা অনুসন্ধান করে থাকে। অনুসন্ধানে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর তাঁরা মামলা করে। এ কারণে দুদকের মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন হওয়ার সুযোগ কম। অবৈধ গ্যাস–সংযোগের বিষয়টি সব কাগজপত্রে রয়েছে। অবৈধ হওয়ায় পরে সংযোগ বিছিন্ন করা হয়েছিল। দুদক এই মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে নিজেদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি গ্রহণ না করতে দুদকের আইনজীবী আদালতে আবেদন করতে পারেন।
জানতে চাইলে দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবেদনটি পাওয়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে করণীয় ঠিক করা হবে।