চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী ও নগরের একাংশ) আসনে লাঙল প্রতীকে নির্বাচন করছেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি। হেভিওয়েট প্রার্থী আনিসুল মহাজোট ও আওয়ামী লীগের সমর্থনে টানা তিনবারসহ মোট ছয়বারের এমপি। কিন্তু এবার সহজে পার পাচ্ছেন না তিনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী ছিলেন এম এ সালাম।
লাঙলের সমর্থনে তাঁর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা হলেও লাঙলের পক্ষে আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতাকর্মী নেই। সম্প্রতি হাটহাজারী উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সভায় উপস্থিত ৫৩ জনের মধ্যে ৫১ জনই স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরীকে সমর্থন দিয়েছেন। শাহজাহানের (কেটলি) পক্ষে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ ভোটের মাঠে রয়েছে। ফলে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে ছয়বারের এমপি আনিসুলকে।
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী (নৌকা) টানা দুইবারের সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন। গত নির্বাচনে ওই দুই উপজেলার নেতাকর্মীরা তাঁর পক্ষে মাঠে নামলেও এবার বেশির ভাগই নেমেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মোতালেবের (ঈগল) পক্ষে। আওয়ামী লীগের দুই উপজেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে তিনজনই ঈগলের সমর্থনে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী (নৌকা) টানা তিনবারের সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফ।
এখানে মূলত নৌকার সঙ্গে লড়াই হবে স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক সুমনের (কেটলি)। আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, দলের সাংগঠনিক ১০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৯টির নেতাকর্মীরা কেটলির পক্ষে মাঠে নেমেছেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী ও নগরের আংশিক), চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ), চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনেও একই অবস্থা। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র সাতজন প্রার্থীর সঙ্গে দলের অনেক নেতাকর্মী মাঠে নেমেছেন। এই ছয় আসনে নৌকা, লাঙল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীতে আওয়ামী লীগ বিভক্ত।
গণসংযোগ-প্রচারণায় কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছেন না। জানতে চাইলে হাটহাজারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন চৌধুরী নোমান বলেন, ‘লাঙলের পক্ষে কাজ করতে এখনো কেন্দ্রীয় নির্দেশনা পাইনি। ভোটের করণীয় নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ থেকে একটি পরামর্শসভার আয়োজন করি। এতে উপস্থিত ৫৩ জনের মধ্যে দুজন ছাড়া অন্যরা কেটলির পক্ষে (স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী) সমর্থন দিয়েছেন।’
একই আসনে লাঙলের সমর্থনে মাঠে নামা চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী মঞ্জু বলেন, ‘দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত অমান্য করে আওয়ামী লীগের একটি অংশ লাঙলের বিরুদ্ধে কাজ করছে। দলের প্রার্থীর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেওয়ার অর্থ হচ্ছে এখানে নৌকার কোনো প্রার্থী নেই। লাঙলের জন্য কাজ করতে হবে। কিন্তু যাঁরা করছেন না তাঁদের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নেবে।’
সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুবউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের আসনে দুই উপজেলার (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) চার সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে শুধু আমিই নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছি। তৃণমূলের বোশর ভাগই ঈগলের পক্ষে। তবে ভোটে আমাদের অবস্থা ভালো।’
চট্টগ্রাম-১১ আসনের বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য মো. ইলিয়াছ বলেন, ‘গত তিনটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মী বর্তমান এমপির পক্ষে কাজ করেছেন। কিন্তু বিভিন্ন কারণে এবার আমরা এমপির সঙ্গে নেই।’
নূপুর দেব, চট্টগ্রাম